ইতিহাসের মৃত্যুঞ্জয়ী মহাবীর শহীদ টিপু সুলতান

ইতিহাসের মৃত্যুঞ্জয়ী মহাবীর শহীদ টিপু সুলতান
লেখক : মুহাম্মদ ইলয়াস নদভী
অনুবাদক : আবদুল্লাহ আল ফারুক
প্রকাশক : মাকতাবাতুল আযহার
মূল্য : ৫০০ টাকা
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০১৭
.
.
টিপু সুলতান সেই স্বদেশপ্রেমী, সাহসি শাসক ও সমরবিদের নাম, যিনি বলেছিলেন, ‘শৃগালের মতো একশো বছর বেঁচে থাকার চেয়ে সিংহের মতো একদিন বেঁচে থাকা উত্তম’। সারাজীবন তিনি ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ইংরেজের করুণা ভিক্ষার চেয়ে মৃত্যুকে প্রাধান্য দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শ্রীরংগাপত্তনামে ৪ মে ১৭৯৯ ঈসাব্দে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে শাহাদাতবরণ করেন।
.
টিপু সুলতানের জীবনী নিয়ে অনেক বইপত্র রচিত হয়েছে। মুসলিম, অমুসলিম উভয়প্রকার ঐতিহাসিকরাই কলম ধরেছেন। কেউ আঁধার সরিয়ে আলো খুঁজেছেন, আবার কেউ চেষ্টা করেছেন অহেতুক ধুম্রজাল সৃষ্টি করতে।
.
তাকে নিয়ে যেসব বইপত্র রচিত হয়েছে তাতে একজন শাসক ও সমরবিদ টিপুর কথাই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আলী নদভীর ভাষায়, ‘এমন কোনো গ্রন্থ আমাদের চোখে পড়েনি- যেখানে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বৃত্তান্ত থেকে শুরু করে তাঁর দ্বীনি ও আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ড, রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুন্নত প্রতিষ্ঠার নানামাত্রিক প্রয়াস এবং জিহাদের ময়দানে তাঁর অসামান্য অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে’।
.
এমন একটি গ্রন্থ রচনা ছিল সময়ের দাবি, যাতে এক মলাটে টিপুর জীবনের সমস্ত দিক আলোচনা করা হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করেছেন টিপু সুলতানের দেশের মানুষ, নদওয়াতুল উলামা লখনৌর কৃতী সন্তান, মুহাম্মদ ইলয়াস নদভী। তার জন্ম দক্ষিনাত্যের ঐতিহাসিক নগরী ভাটকালে।
.
১৯৯২-১৯৯৬, এই চার বছর ধরে লেখক অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন টিপু সুলতানের জীবনী লেখার জন্য। প্রকাশিত, অপ্রকাশিত বইপত্র ও ঐতিহাসিক দলিলসমূহের সাহায্য নিয়ে তিনি বইটি রচনা সমাপ্ত করেন।
.
মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী র. এই বইয়ের পান্ডুলিপি দেখে অত্যন্ত খুশী হন। তিনি একটি ভূমিকাও লিখে দেন। এ বই বিস্তারিত পড়ে বিখ্যাত ঐতিহাসিক খলীক আহমদ নিজামিও একটি ভুমিকা লিখে দেন।
.
বইটি মোট ২৫টি অধ্যায়ে সমাপ্ত। লেখক প্রথমে হিজরি দ্বাদশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থার বিবরণ দিয়েছেন। তারপর মহিসুর ও এর পার্শ্ববর্তী রাজ্যসমূহের আলোচনা করেছেন। দিয়েছেন টিপুর পূর্বপুরুষদের বিবরণ। টিপুর পিতা হায়দার আলী সম্পর্কেও আছে বিস্তারিত আলোচনা। এরপর তুলে ধরেছেন টিপুর জীবনের নানাদিক। একের পর এক যুদ্ধ, চুক্তি আর গাদ্দারদের বিশ্বাসঘাতকতার কথা লেখক আলোচনা করেছেন নির্মোহভাবে। গাদ্দারদের পরিচয় ও তাদের নির্মম পরিণতি নিয়ে সপ্তদশ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। অষ্টাদশ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে টিপুর বিশ্বস্ত সহচরদের পরিচয় নিয়ে। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে শ্রীরংগপত্তনম পতনের কারণ, ভারতবর্ষ ও মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব বিষয়ে সারগর্ভ আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে মুসলিম ধর্মপ্রচারক, আলেম ও দক্ষ শাসক হিসেবে টিপু সুলতানের ভূমিকা নিয়ে । এখানে পাঠক সুলতান টিপুর নানাবিধ পরিচয়ের সঙ্গে পরিচিত হবেন। টিপু সুলতানের আমলে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস ও মহিসুরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়েও আছে বিশদ আলোচনা । জ্ঞানচর্চায় টিপুর আগ্রহ পাঠককে মুগ্ধ করবে। লেখক এমন ৪৫টি বইয়ের তালিকা দিয়েছেন যেগুলো টিপু স্বহস্তে লিখেছেন কিংবা কাউকে দিয়ে সংকলন করিয়েছেন। সুলতানের সেনাবাহিনীর বিন্যাসগুলো পাঠকের নজর কাড়বে। পাঠক পরিচিত হবেন অনেক প্রাচীন পরিভাষার সঙ্গে। বইয়ের শেষে বইয়ে আলোচিত অপরিচিত স্থানগুলোর নাম ও বর্তমান অবস্থানের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে, যা আগ্রহী পাঠকের মনোযোগ কাড়বে।
.
অনুবাদ প্রসঙ্গ :
.
বইয়ের অনুবাদক আবদুল্লাহ আল ফারুক। তার অনুবাদ সম্পর্কে নতুন কিছু বলার নেই। তার কর্মদক্ষতা ইতোমধ্যে বোদ্ধামহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তার সাবলীল অনুবাদের কারণে জীবনী নির্ভর এই বইটিও হয়ে উঠেছে সুখপাঠ্য। বইয়ের শেষে আর্ট পেপারে প্রায় পঞ্চাশটির বেশি ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। মূল বইয়ে এ ছবিগুলো ছিল না। এগুলো অনুবাদক যোগ করেছেন, যা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।
.
দুঃখের বিষয় হলো এ বইতে ‘ছাপাখানার ভূতে’র আনাগোনা একটু বেশিই চোখে পড়েছে। বিশেষ করে ঈসাব্দকে হিজরি লেখা কিংবা ইবনে আসীরকে ‘আল্লাহ ইবনে আসীর’ লেখা, খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে। আশা করি আগামী সংস্করণে এ দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে।

অন্যান্য লেখা

বইয়ের ক্যাটালগ ডাউনলোড করুন