ইবনে তাইমিয়ার সাহসিকতা

৬৯৯ হিজরী।

তাতার সম্রাট মাহমুদ গাযান ৬০ হাজার সৈন্যসহ ফুরাত নদী অতিক্রম করে এগিয়ে গেল সিরিয়ার দিকে। আরো একবার অস্ত্রের ঝনঝনানি ও আহতদের আর্তচিৎকার শোনার প্রহর গুনছিল মুসলিম বিশ্ব। দামেশকে শুরু হয় বুখারির খতম। মসজিদে , মকতবে চলতে থাকে দোয়া।

ইতিমধ্যে মাহমুদ গাযানের বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ হয়েছে সুলতান নাসির মাহমুদ বিন কালাউনের বাহিনীর। পরাজিত হয়েছে সুলতানের বাহিনী। নিহত হয়েছে আমীর ও সাধারণদের অনেকে। সুলতান নিজে কোনোমতে পালিয়ে বেচেছেন।

সে সময় একজন আলেম বললেন, আমি মাহমুদ গাযানের সাথে দেখা করবো। দামেশকের শীর্ষ আলেমদের নিয়ে তিনি উপস্থিত হলেন মাহমুদ গাযানের দরবারে। ‘এরা কারা?’ জিজ্ঞেস করলো মাহমুদ গাযান।

‘ইনারা দামেশকের শ্রেষ্ঠ আলেম’ গাযানের দরবারের একজন বললো। মাহমুদ গাযান আলেমদেরকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিল। আলেমদের সামনের সারীতে আছেন মধ্যবয়সী একজন। তার চেহারার দিকে তাকাতেই মাহমুদ গাযানের অন্তর ভীত হয়ে উঠলো। সে আদেশ দিল সবাইকে সসম্মানে বসানো হোক। মধ্যবয়সী শায়খ কথা শুরু করেন। প্রথমেই তিনি ন্যায়বিচার সম্পর্কে আলোচনা করেন। কথা বলার সময় তার কন্ঠ চড়তে থাকে। এমনকি তিনি মাহমুদ গাযানের হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে বসেন। শায়খ বলতে থাকেন, ‘তুমি নিজেকে মুসলমান দাবী করছো। তোমার সাথে আলেম, কাজি ও ইমামদের বিশাল জামাতও আছে, আর তুমি মুসলিমদের সাথে লড়াই করছো। তোমার বাবা ও দাদা কাফের ছিল। আর তুমি মুসলিম হয়েও প্রতিজ্ঞা করে তা ভংগ করছো’।

শায়খের চেহারায় ক্রোধ ফুটে উঠে। মাহমুদ গাযান হতভম্ব। শায়খের ব্যক্তিত্বের সামনে সে কিছুই বলতে পারছিল না।

মাহমুদ গাযান সবাইকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে। শায়খ হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। তিনি পরিস্কার কন্ঠে বলেন, আমি এই খাবার গ্রহণ করবো না। এগুলো তোমরা মানুষদের থেকে কেড়ে এনেছো। এই ফল এনেছো মানুষের গাছ কেটে।

মাহমুদ গাযান বললো, আমার জন্য দোয়া করুন।

শায়খ বললেন, যদি তুমি আল্লাহর কালিমা সমুন্নত করার জন্য এই যুদ্ধ করে থাকো তাহলে আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করুক। আর যদি দুনিয়া অর্জনের জন্য এই লড়াই করো তাহলে আল্লাহ তোমাকে ধবংস করে দিক।

দৃঢ়পদে বের হয়ে এলেন শায়খ। এই শায়খের নাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া। তিনি বলতেন, যার অন্তর রোগাক্রান্ত সে-ই কেবল আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করে।


টাইমলাইনে কয়েকজন বড়’র ভোজসভার ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। মাহমুদ গাযানের উত্তরাধিকারীরা এখনো আছে, তবে ইবনু তাইমিয়ার উত্তরাধিকারীদের সংখ্যা কমেছে। আপাতত এটুকুই বলার ছিল।

সূত্র
————–
(গাযানের সাথে ইবনু তাইমিয়ার সাক্ষাতের ঘটনা ইমাম যাহাবী উল্লেখ করেছেন তারিখুল ইসলাম গ্রন্থে। ৫২ খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা। ইবনু কাসীর আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহতে উল্লেখ করেছেন। ১৭শ খন্ড, ৭১৭ পৃষ্ঠা। এছাড়া ঘটনাটি বিস্তারিত জানতে উমর বিন আলী বাজ্জার রচিত আল আলামুল আলিয়্যা ফি মানাকিবি শাইখিল ইসলাম ইবনি তাইমিয়্যাহ গ্রন্থের ৬৩-৬৬পৃষ্ঠা দেখা যেতে পারে)

অন্যান্য লেখা

বইয়ের ক্যাটালগ ডাউনলোড করুন