লেখক– শাইখ মুহাম্মদ আল আবদাহ
অনুবাদক– মুফতী আব্দুল্লাহ খান
প্রকাশক– আল রিহাব পাবলিকেশন্স
পৃষ্ঠা–১৭৪
মুদ্রিত মূল্য — ২৫০ টাকা।
মাঝেমাঝে এমন কিছু বই হাতে আসে যেগুলো সম্পর্কে অনলাইন বা অফলাইনে খুব কম আলোচনা হয়, অথচ বইগুলো গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মাকতাবাতুল হাসান থেকে প্রকাশিত ‘সবুজ পৃথিবী ও মুসলমানদের অবদান’ বইটির কথা৷ বিষয়বস্তুর নতুনত্বে ও তথ্যের সমাহারে বইটি অনন্য। কিন্তু এই বই নিয়ে খুব একটা আলোচনা দেখা যায় না৷
‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে কি?’ এই বইটিও আলোচনার আড়ালে থেকে যাওয়া একটি বই৷ বইটি গতানুগতিক কোনো ইতিহাসগ্রন্থ নয়৷ এখানে ইতিহাস থেকে শিক্ষা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হয়৷ এই পুনরাবৃত্তি হুবহু আগের মত হয় না, কিন্তু এর মৌলিক সূত্রগুলো একই থাকে। ইতিহাস পাঠ তাই কোনো বিনোদন নয়, বরং ইতিহাস হলো ভবিষ্যতের আয়না৷ অতিত ইতিহাসের ঘটনাবলী থেকে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করাই ইতিহাস পাঠের উদ্দেশ্য।
এই বইতে লেখক হিজরী চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীর মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস আলোচনা করেছেন। এই সময়ে মুসলিম উম্মাহর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল দুর্যোগের ঝড়ঝাপটা। একদিকে ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছিল ওবায়দিরা, সুযোগ বুঝে আঘাত হানছিল ফেদাইরা, ওদিকে এগিয়ে আসছিল ক্রুসেডাররা। মুসলিম শাসকরা নিজেদের ভেতরকার দ্বন্দ্বে ও যুদ্ধে ক্রমশ দূর্বল হচ্ছিল, একইসাথে তারা হারিয়ে ফেলেছিল ঈমানী দৃঢ়তা ও উম্মাহর প্রতি ভালোবাসা৷
শায়খ আবদাহ তার গ্রন্থে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি বিষয় আলোচনা করেছেন, একইসাথে তিনি এসব ঘটনাবলী থেকে অর্জিত শিক্ষা অনুসন্ধানের দিকে আগ্রহী হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন ঘটনাবলী উল্লেখের মাধ্যমে দেখিয়েছেন এই সময়কালে জনগনের উপর বাড়ছিল করের বোঝা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল দ্রব্যমূল্য, অপরদিকে শাসকশ্রেনী ক্রমেই সম্পদের পাহাড় জমা করছিল। স্বাধীন অনেকগুলো রাজ্য গড়ে উঠে, তারা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে, পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসলমানদের উপর নেমে আসা জুলুম-নির্যাতন সম্পর্কে তারা ছিল নিরুদ্বেগ। এইসব ঘটনাবলীর সাথে আমাদের বর্তমান সময়ের মিল খুজে পাওয়া যায়। ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে উজির আফজালের যুদ্ধের সাথে যেভাবে মিল খুজে পাওয়া যায়, ‘৬৭ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধের। লেখক সে সময়কার বাতেনিদের সাথে শিয়াদের সম্পর্ক আলোচনা করেছেন, একইসাথে বর্তমান যুগের সমস্যাবলীও বিশ্লেষণ করেছেন।
মিসরে ফাতেমীদের উৎখাত করে আহলুস সুন্নাহর আকিদা প্রসারে সালাহুদ্দিনের কর্মপন্থা ও তা থেকে অর্জিত শিক্ষা নিয়েও আছে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। কীভাবে জাগরণের সূচনা হয়, কীভাবে তা পথ হারায় এই সম্পর্কিত আলোচনায় পাঠক পাবেন ভাবনার খোরাক। বইটি তথ্যসমৃদ্ধ, তবে পাঠককে ধরে রাখে৷ পাঠক ইতিহাসের পাতায় ঘুরে ঘুরে আহরণ করতে পারেন মূল্যবান মণিমাণিক্য।
বইটিতে একটাই সমস্যা। ব্যক্তির নাম ও বইপত্রের নাম লেখার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি৷ কোথাও লেখা হয়েছে তারিখুল কামেল, কোথাও আল কামেল, কোথাও আল কামিল। নিয়ামুল মুলক, সিয়ারু আমিন নুবা, ইবনে খালিকান, দুহ ইসলাম, এমন প্রচুর অসংগতি আছে। আরেকটা সমস্যা করা হয়েছে, রেফারেন্সে কিছু কিছু বইয়ের নাম অনুবাদ করে ফেলা হয়েছে। যেমন লুই জুবেতশিকের ‘কাইফা নাফহামুত তারিখ’ কে অনুবাদ করে লেখা হয়েছে, আমরা কিভাবে ইতিহাস অধ্যয়ন করবো। এভাবে আরো অনেকগুলো বইয়ের নাম বাংলায় অনুবাদ করে দেয়া হয়েছে যা খুবিই বিরক্তিকর।
এই সমস্যগুলো বাদ দিলে বইটি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে৷