এক সময় বই পড়ার পর তা সম্পর্কে দুই এক লাইন ডায়েরিতে লিখে রাখার অভ্যাস ছিল। ডায়েরিতে জমে থাকা এমনই কয়েকটি লেখা
১। তাদবীনে সিয়ার ও মাগাজি– আল্লামা কাজী আতহার মোবারকপুরী র.। বিংশ শতাব্দীতে ভারতে যেকজন মনীষী ইতিহাস চর্চায় অসামান্য অবদান রেখেছেন কাজী আতহার মোবারকপুরী তাদের অন্যতম। প্রচুর খেটে খেটে ইতিহাসের বিভিন্ন দুর্লভ তথ্য একত্র করেছেন তিনি। তার এই বইতে তিনি সিয়ার ও মাগাজি সংকলনের ইতিহাস , মাগাজির কিছু প্রসিদ্ধ কিতাব, হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে হিজরী তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত এই শাস্ত্রে উলামায়ে কেরামের অবদান ইত্যাদী নিয়ে আলোচনা করেছেন। বইটি ছেপেছে শাইখুল হিন্দ একাডেমী, দেওবন্দ।
২। খাইরুল কুরুন কী দরসগাহে — আল্লামা কাজী আতহার মোবারকপুরী র. । এই বইকে যদি লেখকের শ্রেষ্ঠ বই বলা হয় তাহলে বাড়াবাড়ি হবে না। এই বইতে তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লামের সময়কাল, সাহাবীদের যুগ এবং তাবেঈদের যুগের বিভিন্ন দরসগাহ এবং এর শিক্ষাপদ্ধতী ও পাঠ্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছেন। বইতে মোট ১২৮ টি দরসগাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এসব দরসগাহ্রে অবস্থান কোথায় ছিল, কারা শিক্ষক ছিলেন, কারা ছাত্র ছিলেন সব তথ্য তিনি তুলে এনেছেন ইতিহাসের পাতা থেকে। বইটি ছেপেছে শাইখুল হিন্দ একাডেমী , দেওবন্দ।
৩। হিন্দুস্তান মে মুসলমানো কা নেজামে তালীম ও তরবিয়ত — সাইয়েদ মানাজির আহসান গিলানী । শায়খ গিলানী তার তুখোড় মেধা ও অসামান্য লিখনীর জন্য সুপরিচিত। এই বইতে মুসলিম শাসনামলে ভারতবর্ষে মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাস বিবৃত করা হয়েছে। দুই খন্ডে প্রায় ৮০০ পৃষ্ঠায় সমাপ্ত এই বইতে লেখক এত বেশি তথ্য সংগ্রহ করেছে যা যে কাউকে অবাক করবে। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের মাকতাবাতুল হক থেকে এর একটি আধুনিক সংস্করণ বের হয়েছে।
৪। মাকালাতে শিবলী — আল্লামা শিবলী নোমানি । আল্লামা শিবলী নোমানি ও তার লিখনীর পরিচয় নতুন করে দেয়ার কিছু নেই। বিভিন্ন বিষয়ে তার লিখিত প্রবন্ধাবলীর সংকলন এই মাকালাত। সম্প্রতি দারুল মুসান্নেফিন আযমগড় ৩ খন্ডে এর একটি আধুনিক সংস্করণ ছেপেছে। তৃতীয় খন্ডটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এতে মুসলিম বিশ্বের অনেক মাদরাসার নাম ও ইতিহাস আছে, যা শেকড়সন্ধানী পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে।
৫। তারিখে ফেরেশতা – মুহাম্মদ কাসিম ফেরেশতা। এই বইয়ের অপরনাম গুলজারে ইব্রাহিমী। মুহাম্মদ কাসেম বিন গোলাম অস্ত্রাবাদী বিজাপুরী ১০১৮ হিজরীতে ( ইবরাহীম আদিল শাহের শাসনামলে বইটি লেখেন। স্বীয় বিষয়ে এটি একটি অসাধারণ বই। ইসলামের সূচনা যুগ থেকে লেখকের সময়কাল পর্যন্ত ভারতবর্ষের শাসকদের ইতিহাস বিবৃত হয়েছে বইটিতে। সাধারণত বইটি তারীখে ফেরেশতা নামেই অধিক পরিচিত ।
৬। জামিয়া নিজামিয়া বাগদাদ কা ইলমি ওয়া ফিকরি কিরদার, এক তাহকিকি জায়েযা – ড. সুহাইল শফীক । ড. সুহাইল শফীক করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ২০০৯ সালে করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। এটি তার পিএইচডি থিসিস। প্রায় সাড়ে পাচশো পৃষ্ঠার এই থিসিসে তিনি বাগদাদের বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়া নিজামিয়ার ইতিহাস, শিক্ষাব্যবস্থা ও ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনা আছে বাগদাদের বাইরে অন্যত্র গড়ে উঠা নিজামিয়াগুলো নিয়েও।
৭। হিন্দুস্তান কী কদিম ইসলামী দরসগাহে — আবুল হাসানাত নদভী । শায়খ আবুল হাসানাত নদভী ছিলেন আল্লামা শিবলী নোমানী ও সাইয়েদ সোলাইমান নদভীর স্নেহধন্য। এই বইতে তিনি মুসলিম শাসনামলে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠা মাদরাসাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি শিক্ষাপদ্ধতী নিয়েও সামান্য আলোচনা আছে। বইটি দারুল মুসান্নেফিন আযমগড় থেকে ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয়। এর ভূমিকা লেখেন আল্লামা সাইয়েদ সোলাইমান নদভী। সম্প্রতি দারুল মুসান্নেফিন থেকে এর একটি আধুনিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।
৮। মিন রাওয়াউই হাদারাতিনা– ড. মোস্তফা আস সিবাঈ। ড. মোস্তফা আস সিবাঈ ছিলেন দামেশক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী আইন অনুষদের ডীন। ১৯৫৫ সালে তিনি রেডিও দামেশকে একটি সিরিজ বকÍৃতা দেন। তাতে ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরেন। সেই বকÍৃতাগুলোই পরে মিন রাওয়াউই হাদারাতিনা নামে প্রকাশিত হয়। এই বইতে ইসলামী সভ্যতা সংস্কৃতির নানাদিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।
৯। মাশরেকি কুতুবখানা — আব্দুস সালাম নদভী। এই বইতে লেখক প্রাচ্যের বিভিন্ন কুতুবখানা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এটি প্রথমে আযমগর থেকে প্রকাশিত মাসিক মাআরিফে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পরে বই আকারে সংকলিত হয়। সম্প্রতি এর একটি আধুনিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।
১০। আল কিতাব ফিল হাদারাতিল ইসলামিয়া– ড ইয়াহইয়া ওহিব জুবুরী। চমৎকার একটি বই। এই বইতে বিদগ্ধ লেখক ইসলামী সভ্যতায় বইয়ের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি আছে ওয়াররাকদের আলোচনা। বই কীভাবে বাধাই করা হতো, মলাট কেমন হতো, বাধাইকারকদের বেতন কেমন ছিল এসব নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য আছে এই বইতে। এছাড়া মুসলিম বিশ্বের বেশকিছু কুতুবখানার বর্ননা আছে এই বইতে। বইটি ১৯৯৮ সালে দারুল গারবিল ইসলামী থেকে প্রকাশিত হয়।
১১। হিন্দুস্তান কে মুসলমান হুকুমরানো কে আহদ কে তামাদ্দুনি কারনামে — দারুল মুসান্নেফিন , আযমগড়। এটি মূলত বিভিন্ন সময় মাসিক মাআরিফে প্রকাশিত প্রবন্ধাবলীর সংকলন। মূল্যবান এই বইটিতে সাইয়েদ সবাহুদ্দিন আব্দুর রহমান। আবু জাফর নদভী, আব্দুস সালাম নদভীর মতো খ্যাতনামা গবেষকদের লেখা আছে। আলোচনা আছে ভারতবর্ষের মাদরাসা , কুতুবখানা, কাগজশিল্প ও সুলতানদের দরবার নিয়ে। সম্প্রতি দারুল মুসান্নেফিন থেকে এর আধুনিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।
১২। তারিখুস সাক্বাফাতিল ইসলামিয়া — ওয়াজেহ রশীদ নদভী । এই বইতে ইসলামী সভ্যতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । বিভিন্ন শহর, জামে মসজিদ ইত্যাদীর আলোচনা আছে বইতে । এছাড়া মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা সম্পর্কেও সংক্ষিপ্ত আলোচনা আছে বইতে। ২০০৯ সালে লখনৌর দারুর রশীদ থেকে বইটি প্রকাশিত হয়।
১৩। আল ফিহরিস্ত– ইবনে নাদীম। বিস্ময়কর এক গ্রন্থ। প্রায় হাজার পৃষ্ঠার এই বইতে লেখক তার যুগ পর্যন্ত প্রকাশিত প্রায় সকল শাস্ত্রের বই ও লেখক সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। তিনি শীয়া মতালম্বী ছিলেন , কিন্তু আল্লামা তাকী উসমানি লিখেছেন, এই বইতে দুয়েকটি জায়গা ব্যতিত আর কোথাও তিনি তার ধর্মীয় মতবাদের কারনে প্রান্তিকতার পরিচয় দেন নি।
১৪। মাদীনাতু ফাস ফী আসরিল মুরাবিতীন ওয়াল মুয়াহহিদীন — ড. জামাল আহমাদ ত্বহা । এই বইতে লেখক মুরাবিতীন ও মুয়াহহিদীন শাসনামলে মরক্কোর ফাস শহরের শিক্ষা সংস্কৃতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ২০০১ সালে ইস্কান্দারিয়ার দারুল ওয়াফা থেকে বইটি প্রকাশিত হয়।