চিশত থেকে পান্ডুয়া

দিল্লীর পথে হাটছিলেন পথিক। মাইলের পর মাইল নির্জন ধু ধু প্রান্তর। মাথার উপর আগুন ঝরাচ্ছে সূর্য। বইছে লু হাওয়া। দুপুরে গিয়াসপুর পৌছালেন পথিক। কবছর আগেও এখানে তেমন জনসমাগম ছিল না। কিন্তু কিছুদিন আগে এক দরবেশ এখানে খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারপর থেকে বাড়ছে জনতার আনাগোনা। এই দরবেশের সাথে দেখা করতে সবাই ব্যাকুল। এমনকি শোনা যায় দিল্লীর সুলতান জালালুদ্দিন খিলজিও দরবেশের সাথে সাক্ষাত করতে চেয়েছেন কিন্তু দরবেশ অনুমতি দেন নি।খানকাহ প্রতিষ্ঠার পর এদিকে এবারই প্রথম আসা। পথিক ভাবলেন ঢু মেরে আসা যাক।

খানকাহর সামনে প্রচন্ড ভীড়। যোহরের নামাজ শেষ হয়েছে একটু আগে। এখন দস্তরখান বিছানো হচ্ছে। প্রতিদিন তিনবেলা খাবারের দস্তরখান বিছানো হয় এখানে। অন্যদের সাথে পথিকও বসে পড়লেন। বিভিন্ন প্রকারের খাবার দেখে পথিক হতবাক। দিল্লীর শাহী দস্তরখানেও এত খাবার নেই হয়তো। এই দরবেশের দস্তরখানে ধনী গরীব সবাইই মেহমান। চারপাশে প্রচুর হট্টগোল হচ্ছে। সদ্য রান্না করা খাবার থেকে ধোয়া উড়ছে।

আচমকা কোলাহল থেমে গেল। নড়ে উঠলো পর্দা। ভেতরের হুজরা থেকে বের হলেন এক শুভ্রকেশ বৃদ্ধ। একপাশে বিছিয়ে রাখা জায়নামাজে বসলেন। সবার চোখ এখন তার দিকে। বৃদ্ধ মুচকি হেসে পাশের জনকে খাবার শুরু করার আদেশ দিলেন। নিজে একটা রুটি আর সামান্য করলা ভাজি নিয়ে আহার শুরু করলেন।

‘কে তিনি?’ জিজ্ঞেস করলো পথিক।
‘খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া’ জবাব দিলো পাশেরজন।

খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর কথা। মুসলিম বিশ্বে তখন দুর্যোগের ঘনঘটা। গোবি মরুভূমি থেকে ধেয়ে আসা তাতারী ঝড়ে বিপর্যস্ত পুরো মুসলিম বিশ্ব। পতন ঘটেছে বোখারা , সমরকন্দ, রায়, হামাদান,খাওয়ারেজম, কাযভিন ও মার্ভের মতো সমৃদ্ধ নগরীগুলোর। বাগদাদে ঘটেছে নির্মম গনহত্যা। সেদিনের এ বিপর্যয় থেকে ভারতবর্ষ ছিল নিরাপদ। মধ্য এশিয়া থেকে হিজরত করে আসা উলামায়ে কেরাম ও অভিজাত পরিবারের সদস্যদের জন্য সেদিনের দিল্লী ছিল নিরাপদ আশ্রয়।
দিল্লী তখন সমৃদ্ধ এক শহর। তার যৌবন-সূর্য তখন মধ্যাকাশে। একই সময়ে চিশতিয়া সিলসিলাও পার করছে তার সোনালী যুগ। ভারতবাসীর হ্নদয় সিংহাসন দখল করে রেখেছেন সুলতানুল আউলিয়া খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া।

দিল্লীর পাশেই , গিয়াসপুরে তার খানকাহ , হয়ে উঠেছে ভারতবাসীর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া পান্ডুয়া, লখনৌতি, দৌলতাবাদ, গুলবার্গ, বুরহানপুর, যয়েনাবাদ,মান্ডো, আহমেদাবাদ,সফিপুর, মানিকপুর ও সলোনেও গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল চিশতিয়া খানকাহ। পিপাসার্ত হ্নদয় নিয়ে আসছে মানুষ। পাচ্ছে পথের সন্ধান।

#

সেদিনের ভারতে চিশতিয়া সিলসিলা একাই ছিল না। একই সময়ে আরো কয়েকটি সিলসিলাও কাজ করেছে। তবে সবার আগে আগমন চিশতিয়া সিলসিলার। সবচেয়ে বেশী প্রচার প্রসারও তারই।

সোহরাওয়ার্দি সিলসিলার কথাই ধরা যাক। ভারতবর্ষে এ সিলসিলার কাজ শুরু করেন শায়খ বাহাউদ্দিন যাকারিয়া মুলতানি। কিন্তু এ সিলসিলার খানকাহ মুলতান ও সিন্ধ এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। একই সময়ে বিহারে শুরু হয় ফেরদৌসিয়া সিলসিলার কাজ। এ সিলসিলার শুরু শায়খ বদরুদ্দিন সমরকন্দীর হাতে হলেও একে নবজীবন দান করেন শায়খ শরফুদ্দীন ইয়াহইয়া মনিরী। এই সিলসিলাও বিহারের বাইরে প্রচার প্রসার পায় নি। পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কাদেরিয়া ও শাত্তারিয়া সিলসিলা প্রকাশ পায়। কাদেরিয়া সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা শাহ নেয়ামত উল্লাহ কাদেরি। শাত্তারিয়া সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা শাহ আবদুল্লাহ শাত্তারী। সম্রাট জাহাংগীরের আমলে এই সিলসিলা নিষ্প্রভ হয়ে যায়। আকবরের শাসনামলে খাজা বাকী বিল্লাহ ভারতবর্ষে নকশবন্দি সিলসিলার কাজ শুরে করেন। মুজাদ্দিদে আলফে সানীর হাতে এ সিলসিলার ব্যাপক সংস্কার ও প্রসার ঘটে। এরপর থেকে এই সিলসিলাকে মুজাদ্দেদিয়া নকশবন্দিয়া নামে অভিহিত করা হয়।

#

চিশত খোরাসানের একটি প্রসিদ্ধ শহর। এখানে কয়েকজন বু্যুর্গ আধ্যাত্মিক সংশোধনের কাজ শুরু করেন। তাদের দিকে সম্পর্ক করেই এই সিলসিলাকে চিশতিয়া সিলসিলা নামকরণ করা হয়।
‘শাজারাতুল আনোয়ার’ থেকে চিশত নামে দুটি শহরের সন্ধান মেলে। একটি খোরাসানে। হেরাতের কাছাকাছি। অন্যটি ভারতবর্ষে । আউচ এবং মুলতানের মাঝামাঝি। এই সিলসিলার নামকরণ হয়েছে খোরাসানের চিশত অনুসারে।

সম্ভবত শায়খ আবু ইসহাক শামীই (মৃত্যু ৩২৯ হিজরী/৯৪০ খ্রিস্টাব্দ) প্রথম বুযুর্গ যার নামের শেষে চিশতী ব্যবহার করা হয়।

ভারতবর্ষে এ সিলসিলা নিয়ে কয়েকজন বু্যুর্গ আগমন করলেও এ সিলসিলার সত্যিকার প্রচার প্রসার শুরু হয় খাজা মইনুদ্দীন চিশতীর সময়ে।

#

সুলতান শিহাবুদ্দীন ঘোরির ভারত আক্রমনের মধ্যবর্তী সময়ে (৫৭৯ হিজরী- ৬০২ হিজরী) খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমিরে অবস্থান নেন এবং খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। আজমীরের শাসনকর্তা তখন পৃথ্বিরাজ, যার সাহসিকতার খ্যাতি ছড়িয়েছিল বহুদূর। সে যুগে আজমীরই ছিল সমগ্র ভারতের প্রাণকেন্দ্র।

‘সিয়ারুল আউলিয়া’ থেকে জানা যায় একবার পৃথ্বিরাজ একজন মুসলমানকে কষ্ট দেয়। খাজা সাহেব এর প্রতিকার চেয়ে পৃথ্বিরাজকে পত্র লেখেন। পৃথ্বিরাজ পত্রের জবাব দেয় অবমাননাকর ভাষায়। খাজা সাহেব তখন বলেন, আমি পৃথ্বিরাজকে বন্দী করে মোহাম্মদ ঘোরির হাতে তুলে দিলাম। এর কিছুদিন পরেই মোহাম্মদ ঘোরি হামলা করেন এবং পৃথ্বিরাজ পরাজিত হন।

খাজা সাহেবের জীবদ্দাশয়ই ভারতের রাজনীতিতে পটপরিবর্তন ঘটে। আজমীর তার গুরুত্ব হারায় । সেস্থান দখল করে দিল্লী। খাজা সাহেব তার প্রধান শাগরেদ কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীকে দিল্লীতে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়ে নিজে বাকী জীবন আজমিরেই কাটিয়ে দেন।

খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়ার সময়কে চিশতিয়া সিলসিলার স্বর্ণযুগ বিবেচনা করা হয় । গিয়াসপুরে তার খানকাহ ছিল আধ্যাত্মিকতার প্রাণকেন্দ্র। ধনী গরীবের কোনো ভেদাভেদ ছিলো না সেখানে। দুবেলা বিছানো হত শাহী দস্তরখান। সেই দস্তরখানের আয়োজন হার মানাতো শাহী দরবারকেও। খাজা সাহেব নিজে সারা বছর রোজা রাখতেন। আহার করতেন এক আধখানা রুটি , সামান্য করোলা ভাজি অথবা ভাত দিয়ে। তার কাছে হাদিয়া-তোহফা যা আসত সবই বিলিয়ে দিতেন আগত ও বিদায়ী লোকদের মাঝে।

#

চিশতিয়া সিলসিলার শায়খরা প্রথম থেকেই দুটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছিলেন। একটি হলো রাজ দরবারের সাথে কোন সম্পর্ক না রাখা।
খাজা সাহেবের দরবারে সম্রাট জালালুদ্দিন খিলজি কয়েকবার আসতে চেয়েও অনুমতি পান নি। আলাউদ্দিন খিলজি একটু জোরাজুরি করেছিলেন। খাজা সাহেব বলেছিলেন, ‘এই ফকিরের ঘরে দুটি দরজা। এক দরজা দিয়ে বাদশাহ প্রবেশ করবে অন্য দরজা দিয়ে ফকির বেরিয়ে যাবে’

সম্রাটরা আর তাকে ঘাটাতে সাহস করেন নি। দূর থেকে শ্রদ্ধা করে গেছেন। বিপদে-আপদে দোয়া চেয়েছেন।

কুতবুদ্দিন মোবারক শাহ কিন্তু এত সহজে সব মেনে নেন নি। তার আদেশ ছিল প্রতি চান্দ্রমাসের প্রথম দিনে শহরের গণ্যমান্য লোকেরা যেন তার দরবারে গিয়ে তার সাথে দেখা করে। খাজা সাহেব কখনোই এ আদেশ মানেন নি। শুধু নিজের খাদেম ইকবালকে পাঠাতেন সেই অনুষ্ঠানে। আমীর খসরুর ভাষ্যানুযায়ী কুতুবুদ্দীন নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে খাজা সাহেবের মাথা আনতে পারবে তাকে এক হাজার তংকা বখশিশ দেয়া হবে। প্রায় চার বছর এই দ্বন্দ চলতেই থাকে। শেষে খসরু খানের হাতে কুতুবুদ্দীন নিহত হলে এই বিরোধের নিরসন হয়।

খাজা সাহেব জীবনে একবারই রাজদরবারে গিয়েছেন। সম্রাট গিয়াসুদ্দিন তুঘলকের সময়ে। সামা শোনার বৈধতা নিয়ে রাজদরবারে বিতর্কসভা হয়। খাজা সাহেব সেখানে অংশগ্রহণ করেন।

কুতুবুদ্দীন মুনাওয়ারের ঘটনা থেকেও রাজদরবারের প্রতি নিস্পৃহতার প্রমান মেলে। তিনি হাসী নামক এলাকায় থাকতেন। একবার সে এলাকায় মুহাম্মদ বিন তুঘলক সফরে যান। সবাই তুঘলকের সাথে দেখা করতে গেলেও তিনি যান নি। পরে তাকে দিল্লীতে তলব হয়। তুঘলকের দরবারে দাড়িয়েই তিনি উচ্চারণ করেছিলেন ‘আল আযমাতু লিল্লাহ’

#

রাজদরবারের সাথে সম্পর্কহীনতা মানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উদাসিনতা নয়। চিশতিয়া সিলসিলার শায়খগন সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাবলীর প্রতি সতর্ক নজর রাখতেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলক যখন ঠাঠ মালিক তুগার বিদ্রোহ দমন করতে যান তখন নাসিরুদ্দীন চেরাগে দেহল্ভীও তার সংগ দেন।

বাংলার বিখ্যাত বুযুর্গ নুর কুতবে আলমের সময় বাংলার রাজনৈতিক আকাশে ছিল দুর্যোগের ঘনঘটা। রাজশাহী জেলার ভাতুরিয়ার জায়গিরদার রাজা গনেশের অত্যাচারে জনগন ছিল অতিষ্ঠ। নুর কুতবে আলম তখন জৌনপুরের সুলতান ইবরাহীম শর্কির কাছে পত্র লিখে এ ব্যাপারে তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তার এবং সাইয়েদ আশরাফ জাহাংগীরের পত্রালাপ থেকেই বোঝা যায় সমকালীন রাজনীতি সম্পর্কে তারা অসচেতন ছিলেন না ।

#

সিলসিলার দ্বিতীয় মূলনীতিটি ছিল, সিলসিলার একটি কেন্দ্র থাকবে। সেই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রনে সিলসিলার অন্য খানকাহগুলো পরিচালিত হবে। এই কেন্দ্র বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর সময়ে সিলসিলার মূলকেন্দ্র ছিল আজমীর। কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীর সময়ে দিল্লী। ফরিদুদ্দীন গঞ্জে শকর দিল্লীর চাকচিক্য পছন্দ করেন নি। বখতিয়ার কাকীর পর তিনি হাসীতেই ফিরে যান। নিজামুদ্দীন আউলিয়ার সময় কেন্দ্র গিয়াসপুরে। নাসিরুদ্দীন চেরাগে দিল্লীর সময়ে কেন্দ্র আবার দিল্লীতে।

নাসিরুদ্দীনের ইন্তেকালের কিছুদিন পরেই মুহাম্মদ বিন তুঘলক রাজধানী সরিয়ে নেন দেবগিরিতে। দিল্লী হয়ে যায় বিরান । এ সময় চিশতিয়া সিলসিলার মাশায়েখগন দুটি মূলনীতি থেকেই সরে আসেন। নির্দিষ্ট কোন কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা ব্যতিতই বাংলা, দাকান, মালোয়াহ এসব এলাকাতে স্বাধীন খানকাহ গড়ে উঠে। চিশতি সিলসিলার অনেকেই রাজদরবারের সাথে জড়িয়ে পড়েন।

প্রফেসর খলিক আহমদ নিজামী লিখেছেন, এভাবেই ভারতবর্ষে চিশতিয়া সিলসিলার প্রথম যুগ শেষ হয়।

চিশতী শায়খগন কখনোই আধ্যাত্মিকতা বলতে বৈরাগ্যবাদ কিংবা নির্জনবাসকে সমর্থন করেন নি। তারা সমাজে থেকেই সমাজ বদলের চেষ্টা করেছেন। জনতার মাঝে নির্জনতা খুজেছেন।

শায়খ নাসিরুদ্দীন চেরাগে দিল্লী একবার আমীর খসরুর মাধ্যমে নিজামুদ্দীন আউলিয়ার কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন নির্জনে থাকার।

‘নির্জনে থাকার অনুমতি নেই। তুমি নির্জনে চলে গেলে দিল্লীর লোকদের দেখভাল করবে কে?’ বলেছিলেন নিজামুদ্দীন আউলিয়া।

চিশতী শায়খদের খানকাহগুলো সমকালীন জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা বিপর্যয়ের সময়গুলিতে এসব খানকাহ ছিলো শান্ত, স্থির। জনগনের আত্মার খোরাক জুগিয়েছেন তারা।

#

ইলমবিহীন তাসাউফ চর্চা ক্ষতিকর। অনেক সময় এটি বিভ্রান্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়। কুরআন , সুন্নাহর সঠিক ইলমের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারনেই বিভিন্ন সময় তাসাউফপন্থীদের মধ্যে বিকৃত আকীদা বিশ্বাস গড়ে উঠেছে। চিশতী শায়খগন প্রথম থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন।

পান্ডুয়ার বিখ্যাত খানকাহর প্রতিষ্ঠাতা আখী সিরাজের ঘটনা থেকে বিষয়টি পরিস্কার হয়।

আখী সিরাজ, যার পুরো নাম সিরাজুদ্দীন উসমান, তিনি ছিলান লখনৌতির বাসিন্দা। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষে কিংবা চতুর্দশ শতাব্দীর শুরুতে তিনি নিজামুদ্দীন আউলিয়ার খানকাহে যান। তারপর থেকে সেখানেই থাকতেন। শুধু বছরে দু একবার লখনৌতি আসতেন। আমলের দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও তার তেমন পড়াশুনা ছিল না। নিজামুদ্দীন আউলিয়াকে কেউ কেউ বলেছিলেন তাকে এযাজত দিতে। কিন্তু তিনি রাজী হন নি। বলেছিলেন, আমাদের এ কাজে প্রথম শর্তই হলো ইলম থাকা। তার তো ইলমই নেই।

পরে মাওলানা ফখরুদ্দীন যারাদি তাকে পড়াশোনা করান। নিজামুদ্দীন আউলিয়ার খানকাহে বিশাল কুতুবখানাও ছিল। আখী সিরাজ সেই কুতুবখনায় পড়াশুনা করতেন।

আবদুল হক মুহাদ্দীসে দেহল্ভীর ভাষ্যানুযায়ী, নিজামুদ্দীন আউলিয়ার ইন্তেকালের পর তিনি বাংলায় ফিরে আসার সময় সেই কুতুবখানা থেকে অনেক কিতাব নিয়ে আসেন। পান্ডুয়ার খানকায় তিনি একটি কুতুবখানাও প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ছিল বাংলার প্রথম চিশতি খানকাহ ও কুতুবখানা। (সমাপ্ত)

তথ্যসূত্র

হিন্দুস্তান মে মুসলমানো কা নেজামে তালীম ও তরবিয়ত – সাইয়েদ মানাজির আহসান গিলানী
তারীখে মাশায়িখে চিশত – প্রফেসর খলীক আহমদ নিজামী
আখবারুল আখইয়ার– আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী
সিয়ারুল আউলিয়া — সাইয়েদ মোহাম্মদ বিন মোবারক কিরমানী (মীর খোর্দ)
তারীখে দাওয়াত ও আযিমত — সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী
তারীখে ফেরেশতা– আবুল কাসেম ফেরেশতা

অন্যান্য লেখা

বইয়ের ক্যাটালগ ডাউনলোড করুন