দিল্লি জ্বলছে।
কুতুবুদ্দিন আইবেকের দিল্লি জ্বলছে। যে দিল্লিতে একদিন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ, সেই দিল্লিতে আজ আগুন ও কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে অশোকনগরের মসজিদ। পুড়ে গেছে মসজিদের সদর দরজা। মাটিতে পড়ে আছে ছিন্নভিন্ন মুসহাফ। কুতুব মিনারের শহরে আজ মসজিদের মিনারে উড়ছে হনুমানের পতাকা।
দিল্লি জ্বলছে।
দিল্লিকে লোকে সম্মান করে বলতো হজরত দিল্লি। আমির খসরু এই শহরকে বলতেন জান্নাতে আদন। ইসামি এই শহরের মাটিকে বলেছিলেন, কিবরিতে আহমার। হজরত দিল্লির উপর বারবার আঘাত এসেছে। তৈমুর লঙ ও নাদের শাহের আক্রমন, ইংরেজদের বর্বরতা বারবার হজরত দিল্লিকে পরিণত করেছিল মরহুম দিল্লিতে। দিল্লিকে বলা হত হিন্দুস্তানের
দিল। হিন্দুস্তানের দিল আজ রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত।
দিল্লি জ্বলছে।
ইসলামের সভ্যতা-সংস্কৃতির ইতিহাসে দিল্লির অবস্থান বাগদাদ, গ্রানাডা, কর্ডোভা ও ফুসতাতের পাশেই। ছয়শো বছর ধরে এই শহরে বিকশিত হয়েছিল ইসলামি সভ্যতা। ত্রয়োদশ শতকে যখন তাতার ঝড়ে লন্ডভন্ড মধ্য এশিয়ার মুসলমানরা, দিল্লি ছিল তাদের নিরাপদ আশ্রয়। এক সময় যে শহরের মুসলমানরা মজলুমদের আশ্রয় দিয়েছিল, আজ তারাই মজলুম
অন্যের হাতে। যাদের পূর্বপুরুষ তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন দিল্লিকে, আজ তাদের রক্ত ঝরছে দিল্লির মাটিতে।
দিল্লি জ্বলছে।
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে এই শহরে ছিল এক হাজার মাদরাসা ও দুই হাজার খানকাহ। দিল্লির অদূরে গিয়াসপুরে ছিল নিজামুদ্দিন আউলিয়ার খানকাহ। সুলতান গিয়াসুদ্দিন তুঘলক ক্ষিপ্ত ছিলেন নিজামুদ্দিন আউলিয়ার উপর। লখনৌতি অভিযান শেষে ফেরার পথে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, আমি দিল্লি ফেরার আগেই শহর ছাড়া করো নিজামুদ্দিনকে। শুনে মুচকি হেসেছিলেন নিজামুদ্দিন আউলিয়া। ধীর কন্ঠে বলেছিলেন, হুনুজ দিহলি দুরাস্ত (দিল্লি এখনো দূরে আছে)। গিয়াসুদ্দিন তুঘলকের দিল্লি ফেরা হয়নি। শহর থেকে একটু দূরে থাকতেই মারা গিয়েছিলেন তিনি। রক্তাক্ত দিল্লিকে নিয়ে হিন্দুত্ববাদী শক্তি যে স্বপ্ন দেখছে সে স্বপ্ন পূরণ হবে না, ইনশাআল্লাহ। তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের বার্তা, হুনুজ দিহলি দুরাস্ত।
দিল্লি জ্বলছে।
দিল্লির রাস্তায় পিটিয়ে মারা হয়েছে মুসলমানদের। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মুসলমানদের দোকানপাট। অস্ত্রধারীরা টহল দিচ্ছে দিল্লির অলিগলিতে। দিল্লির মুসলমানরা পার করছে এক দুঃসময়। সেক্যুলারিজমের যে ভারতীয় মডেলকে এতদিন প্রচার করা হত ভারতীয় মুসলমানদের রক্ষাকবচ বলে, মুখ থুবড়ে পড়েছে সেই প্রকল্প। যেই ধর্মগুরুরা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং রামের শিক্ষাকে এক করে দেখাতেন, প্রচার করতেন উদারতার বানী, তারাও আজ নীরব। ‘ওয়াহদাতুল আদইয়ানে’র ফেরিওয়ালারাও দিতে পারেননি কোনো সমাধান। ভারতীয় মুসলমানদের জন্য এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইশারা। তাদের সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে শরিয়াহর দিকে ফিরে আসার মধ্যেই। এর বাইরে কোনো মতবাদ তাদের শান্তি-স্বস্তি দিবে না। সেক্যুলারিজমের লোভনীয় ফানুস কিংবা আন্তধর্মীয় ভ্রাতৃত্বের ফাঁকা বুলি মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না। ঈমান ও কুফরের এই দ্বন্দ্বে মাঝামাঝি থাকার সুযোগ নেই। শক্তির জবাব শক্তি দিয়েই দিতে হবে। ইটের জবাব পাথর দিয়ে। আল কওলু কওলুস সওয়ারিম।
দিল্লি জ্বলছে।
দিল্লি আগুনে পুড়ছে। তবে মুসলমানরা হারিয়ে যাবে না। তারা ছাইয়ের স্তুপ থেকে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। বি ইযনিল্লাহ। শিহাবুদ্দিন ঘুরীর আজমীর জয়ের প্রাক্কালে পৃথ্বীরাজকে লক্ষ্য করে মঈনুদ্দিন চিশতি আজমেরি বলেছিলেন, মান তুরা এয় পিত্থুরা জিন্দা গেরেফতাম, বদস্তে লশকরে ইসলাম (হে পৃথ্বীরাজ তোমাকে আমি জীবিত বন্দি করে মুসলিম সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিলাম)। হিন্দুত্ববাদী শক্তি যে খেলা শুরু করেছে তাঁর সমাপ্তি হবে তাদেরকে লশকরে ইসলামের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমেই। বি ইযনিল্লাহ। শীঘ্রই কুতুব মিনারের চূড়া থেকে আবারও লশকরে ইসলামের তাকবীর উচ্চারিত হবে। সে তাকবীর ছড়িয়ে পড়বে রাজস্থান থেকে হায়দারাবাদ, ঝাড়খন্ড থেকে আহমেদাবাদ। দিল্লির জামে মসজিদে শীঘ্রই খুতবা দিবেন শাহ আবদুল আজিজের উত্তরসূরীরা। ফিকহের কিতাবের ধূসর অধ্যায়গুলো বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই…