৯৬ হিজরীতে কুতাইবা বিন মুসলিম সিদ্ধান্ত নেন তিনি চীনে হামলা করবেন। তিনি মার্ভ থেকে সেনাবাহিনী নিয়ে রওনা হন। ফারগানা পৌছে তিনি সেখান থেকে কাশগড় পর্যন্ত পাহাড়ি পথ সমতল করেন। অভিজ্ঞ সেনাপতি কাসিরকে পাঠান কাশগড়ে হামলা করার জন্য। কাশগড় চীনের সীমান্ত শহর।কাসির এই শহর জয় করেন। এরপর তিনি চীনের ভেতরে প্রবেশ করেন। চীনের সম্রাট মুসলমানদের লাগাতার হামলায় ভয় পেয়ে যায়। তিনি কুতাইবার কাছে পত্র লিখে বলেন , আমার কাছে আপনাদের কোনো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে প্রেরণ করুন যেন আপনাদের উদ্দেশ্য ও আপনাদের ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। কুতাইবা তখন হুবাইরা ইবনুল মুশামরাজ কিলাবি ও কয়েকজন সুবক্তাকে চীন সম্রাটের দরবারে প্রেরণ করেন। তাদের প্রেরণ করার সময় কুতাইবা বলেন, তোমরা সম্রাটকে জানিয়ে দিয়ো আমি শপথ করেছি, হয় তারা ইসলামে প্রবেশ করবে অথবা আমি তাদের থেকে জিযিয়া নিব, আমি চীনের মাটি মাড়াবো, এবং তাদের শাহজাদাদের নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিব। অন্যথায় তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাক।
হুবাইরা উপস্থিত হলেন সম্রাটে্র রাজধানীতে। ইবনে কাসীর লিখেছেন, এটি ছিল অত্যন্ত মনোরম একটি শহর। শহরের ফটক ছিল ৯৯ টি।
প্রথমদিন সম্রাটের সাথে সাক্ষাতকালে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা পরেছিল সাদা পোষাক। ভেতরে ছিল পাতলা গাউন। শরীরে মেখেছিল সুগন্ধী। পায়ে ছিল জুতো। পরদিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সম্রাটের সামনে এলো নকশা করা পোষাক পরে। তাদের মাথায় ছিল পাগড়ি। তৃতীয়দিন তারা পরলেন সাদা পোষাক। মাথায় ছিল শিরস্ত্রাণ। হাতে বর্শা ও তরবারী। সম্রাট জিজ্ঞেস করলেন, তিনদিন তোমরা তিন রকমের পোষাক পরলে কেন?
হুবাইরা বললেন, প্রথম দিন যে পোষাক পরেছি তা পরে আমরা আমাদের পরিবারের কাছে যাই। দ্বিতীয় দিন যা পরেছি তা পরে আমরা আমাদের আমীরের সামনে যাই। আর আজ যা পরেছি তা পরে আমরা শত্রুদের মুখোমুখি হই।
চীন সম্রাট নানা বিষয়ে কথা বলেন। শেষে তিনি বলেন, তোমাদেরকে তো জ্ঞানীই মনে হয়েছে। আমি জানতে পেরেছি তোমাদের সেনাসংখ্যা অনেক কম। আমার সেনারা তোমাদের পিষ্ট করে ফেলবে। তোমাদের সেনাপতিকে বলে দিয়ো, এখন ফিরে যাওয়াতেই তোমাদের কল্যান নিহিত।
হুবাইরা সম্রাটকে জবাব দিলেন, হে সম্রাট, কে এই বাহিনীকে অল্প বলতে পারে, যার একমাথা রয়েছে আপনার সীমান্তে, আর অন্য মাথা যায়তুনের বাগানে (এখানে দারুল খিলাফাহ দামেশকের দিকে ইংগিত করেছেন)। আপনি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। যখন তা আসবে আমরা তাকে বরণ করে নিব। আমরা মৃত্যুকে ভয় করিনা।
হুবাইরার জবাব শুনে চীন সম্রাট ঘাবড়ে যান। তিনি বলেন, কী করলে তোমাদের সেনাপতি ফিরে যাবেন?
হুবাইরা বললেন, তিনি শপথ করেছিলেন, হয় আপনারা ইসলাম গ্রহণ করবেন অথবা জিযিয়া দিবেন। এরপর তিনি আপনাদের মাটি মাড়াবেন এবং শাহজাদাদের নিজের আয়ত্তে নিবেন। সম্রাট বললেন, ঠিক আছে আমি তার শপথ পূরণ করবো।
এরপর সম্রাট কয়েকটি স্বর্ণের পাত্রে কিছু মাটি, জিযিয়া হিসেবে প্রচুর নগদ অর্থ আর চারজন শাহজাদাকে কুতাইবার নিকট পাঠিয়ে দিলেন।
*অভিযান চলাকালেই কুতাইবার কাছে সংবাদ আসে খলিফা ওলিদ বিন আব্দুল মালিক ইন্তেকাল করেছেন। পরবর্তী খলিফা সুলাইমান বিন আব্দুল মালিক সিংহাসনে আরোহন করেছেন, ইতিপূর্বে কুতাইবা যাকে খেলাফত থেকে দূরে সরানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলেন। চিন্তিত কুতাইবা তাই মার্ভে ফিরে যান।
(১।আল কামিল ফিত তারিখ, ৪র্থ খন্ড, ২৯০ পৃষ্ঠা– ইবনে আসির।
২।আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১২শ খন্ড, ৫৫২ পৃষ্ঠা– ইবনে কাসির।)