দামেশক। ৯৯ হিজরি।
একজন নারীর জন্য তার স্বামীর উন্নতি ও মর্যাদা প্রাপ্তি পরম আনন্দের বিষয়৷ এমনই এক মুহুর্ত উপস্থিত ফাতেমা বিন্তু আবদুল মালিকের সামনে৷ ১৪ বছরের বৈবাহিক জীবনে এমন সময় আর আসেনি৷ এমন এক সৌভাগ্যের হাতছানি এসেছে যা খুব কম নারীর ভাগ্যেই জুটে৷
শীঘ্রই মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসেবে বাইয়াত নিবেন তাঁর স্বামী। ইতিমধ্যেই শহরে কেমন একটা সাড়া পড়ে গেছে।
অনেক স্মৃতি মনে আসছে তার। ১৪ বছর আগে এক সকালে তাঁর পিতা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান বসেছিলেন এক সুদর্শন তরুনের সামনে। তরুণটি তার ভাতিজা। তরুণের জন্ম মদীনায়। সেখানেই তার পড়াশোনার হাতে খড়ি৷ ইতিমধ্যেই ইলমের জগতে এই তরুণ আলো ছড়াচ্ছে। তার চলাফেরায় ফুটে উঠে আভিজাত্য। তার পোষাক কিনে আনা হয় চারশো দিরহামে। তিনি যে পথে হাটেন সে পথের বাতাসে মিশে যায় আতরের সুগন্ধী।
আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান অনেকদিন থেকেই ভাবছিলেন, তার মেয়ে ফাতেমাকে কার হাতে তুলে দেয়া যায়। অবশেষে তার মনে হয়েছে, আপন ভাতিজা উমর ইবনে আব্দুল আযিযই তো আছে। উমরের ইলম ও তাকওয়া তাকে মুগ্ধ করে। তিনি জানতেন মাইমুন বিন মেহরান বলেছেন, উমার বিন আবদুল আযিয আলেমদের শিক্ষক।
‘উমর, আমি তোমার কাছে আমার মেয়েকে বিবাহ দিতে চাই’ বললেন আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান, পঞ্চম উমাইয়া খলিফা। তরুণের চেহারায় ফুটে উঠে সলাজ হাসি।
‘উমর তোমার ব্যয় কেমন?’ জিজ্ঞেস করলেন তিনি। জবাবে উমর সুরা ফুরকানের ৬৭ নং আয়াত তেলাওয়াত করলেন৷
‘তারা যখন ব্যয় করে অযথা ব্যয় করে না, কৃপণতা করে না। তারা এ দুয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করে’।
জবান শুনে আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান মুগ্ধ হলেন। শীঘ্রই বিবাহ হয়ে গেল।
—
খলিফা হিসেবে বাইয়াত নিলেন ফাতেমার স্বামী উমার বিন আব্দুল আজিজ। সারাদিন কাজে ব্যস্ত ছিলেন, রাতের বেলা তিনি স্ত্রীর কাছে এলেন।
‘ফাতেমা, তোমাকে কিছু বলার ছিল’
‘বলে ফেলুন প্রিয়তম’
‘ তোমার যেসব অলংকার আছে, এসব কোথায় পেয়েছ?’
‘এগুলো বাবা আমাকে দিয়েছেন’
‘আমি চাই তুমি এগুলো বাইতুল মালে দিয়ে দাও। আমি চাইনা আমি, তুমি ও অলংকার সব এক ঘরে থাকুক’
‘আমি তো শুধু আপনার সন্তুষ্টিই চাই। এখুনি সব অলংকার নিয়ে যান। বাইতুল মালে জমা করে দিন’
—
শুরু হলো ফাতেমার নতুন জীবন৷ ফাতেমা জন্মেছিলেন রাজপ্রাসাদে। পিতা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান ছিলেন খলিফা। চার ভাই, ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক, সুলাইমান বিন আবদুল মালিক, ইয়াযিদ বিন আবদুল মালিক, হিশাম বিন আবদুল মালিক প্রত্যেকেই ছিলেন খলিফা। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছিলেন, কিন্তু তিনি নিজেকে প্রস্তুত করে নেন নতুন জীবনের জন্য, যে পথে হাটছিলেন তার স্বামী উমার বিন আবদুল আজিজ। তারুণ্যের শুরুতে যে মানুষটি ছিলেন উচ্ছ্বল, সেই তিনিই খেলাফতের দায়িত্ব পেয়ে হয়ে উঠেন প্রচন্ড দায়িত্ববান৷ ত্যাগ করেন সবরকমের বিলাসিতা। তাকে সংগ দেন ফাতেমা।
ইরাকের এক মহিলা এসেছিলেন উমার বিন আবদুল আজিজের গৃহে৷ দেখলেন সুতা বুনছেন ফাতেমা। ঘরে নেই কোনো দামী আসবাব। এমনকি চাকরবাকরও নেই।
‘আপনাদের ঘরে দামি কিছুই নেই?’ বিস্ময় প্রকাশ করে সেই মহিলা। ফাতেমা মুচকি হাসেন।
ফাতেমাকে বলা হয়েছিল, আপনার স্বামী সম্পর্কে কিছু বলুন। তিনি বলেছিলেন, অনেকসময় তিনি মুনাজাতে অঝোরে কাঁদতে থাকেন। তিনি বারবার বলেন গোটা উম্মাহর দায়িত্ব আমার কাঁধে। কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর কাছে কী জবাব দিব?
—
ফাতেমা বিনতে আবদুল মালিক ছিলেন সাহিত্যিক। কাব্যচর্চায় পারংগম। হাদীসশাস্ত্রেও তিনি ছিলেন দক্ষ। তার থেকে হাদিস বর্ননা করেছেন আতা ইবনু আবি রবাহ ও উত্তর আফ্রিকা বিজেতা উকবা বিন নাফের ছেলে উবাইদুল্লাহ।
(তারিখু দিমাশক, নিসাউন ফি কুসুরিল উমারা)