১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চে উমর মুখতার মিসর সফর করেন। এই সফরে তার সংগী ছিলেন আলি পাশা উবাইদি।
সেসময় উমর মুখতারের একের পর এক হামলার কারনে ইতালিয়ানরা নির্বিঘ্নে রাতে ঘুমাতেও পারছিল না। মুজাহিদদের কাছে অস্ত্র ছিল খুবই কম, যা ছিল তাও পুরনো মান্ধাতা আমলের। তারা লড়ছিল বিশ্বের অন্যতম প্রশিক্ষিত বাহিনীর বিরুদ্ধে। সংখ্যায় তারা ছিল কম, তবুও তারা নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছিল ইতালিয়ানদের। ইতালিয়ানরা বুঝতে পারছিল মুজাহিদদের নেতৃত্বে আছেন উমর মুখতার। তাকে কাবু করতে পারলেই যুদ্ধ অর্ধেক জেতা হয়ে যাবে। উমর মুখতার মিসরে অবস্থান কালে ইতালি সরকার তাদের স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে উমর মুখতারের সাথে যোগাযোগ করে। তারা প্রস্তাব করে, উমর মুখতার চাইলে ইতালি সরকার তাকে প্রচুর আর্থিক সহায়তা করবে যা দিয়ে তিনি বেনগাজি বা আল মার্জ শহরে বাড়ি করতে পারবেন। আজীবন ইতালি সরকার তাকে নিরাপত্তা দিবে। তিনি সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। উমর মুখতারকে দেয়া হবে ইতালির শ্রেষ্ঠ নাগরিকদের সমমর্যাদা। উমর মুখতার যদি চান তাহলে তাকে মিসরে বসবাসের সুযোগ করে দিতেও ইতালি সরকার রাজি। শর্ত একটাই, তাকে ইদরিস সানুসির সাথে সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে হবে। উমর মুখতারকে আজীবন মোটা অংকের ভাতা দেয়া হবে। এই চুক্তিতে সবরকমের গোপনিয়তা রক্ষা করা হবে। চুক্তি সম্পর্কে কেউ জানবে না। শুধু উমর মুখতার তার অনুসারিদের বলে দিবেন তারা যেন ইতালির বিরুদ্ধে লড়াই না করে।
একটি লোভনীয় অফার। বিপদসংকুল , অনিশ্চিত জীবনের মাঝে সম্ভাবনার হাতছানি। চাইলেই উমর মুখতার এই সুযোগ গ্রহন করতে পারতেন। কেউ জানতো না তার উদ্দেশ্য। তিনি একটা ফতুয়া দিয়ে দিতেন, ইতালিয়ানরা মুসলমানদের বন্ধু। তারা এখানে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে এসেছে। যেমন ফতুয়া দিয়ে থাকেন একালের দরবারী আলেমগন। কিন্তু উমর মুখতার দুনিয়ার বিনিময়ে দ্বীনকে বিকিয়ে দিতে চাননি। তিনি স্পষ্টকন্ঠে বলে দিয়েছিলেন, তোমরা ভালো করে জেনে নাও, আমি কোনো খাবারের লোকমা নই, যার ইচ্ছা সহজে গিলে ফেলবে। যদি কেউ আমার ঈমান আকিদা পরিবর্তন করতে চায় তাহলে আল্লাহ তাকে ব্যর্থ করে দিবেন। যারা ইতালিকে চিনতে পারেনি তারা মূর্খ। আমি মূর্খ নই। এটা ভাবা ভুল হবে যে, আমি রক্তের প্রতিশোধ না নিয়েই শান্তির আলোচনায় চলে যাবো। আমি পানাহ চাই সেই কালোদিন থেকে যেদিন আমি ইতালিয়ানদের বাহনে পরিনত হব। আল্লাহ না করুন যদি কোনোদিন আমি এই জিহাদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেই, তাহলে বারকাহর অধিবাসীরা যেন অস্ত্র সমর্পনের ক্ষেত্রে আমার আনুগত্য না করে। আমি খুব ভালো করেই জানি লিবিয়ায় আমার ও আমার সাথিদের যদি কোনো সম্মান ও মূল্য থাকে তাহলে তা আছে সানুসিদের সাথে সম্পর্ক রাখার কারনেই।
ইতালিয়ানরা এই জবাব পেয়েও হাল ছাড়েনি। তারা উমর মুখতারকে একের পর এক অফার দিতেই থাকে। এমনকি তিনি দেশে ফেরার পরেও তারা এমন কয়েকটি বার্তা পাঠায়।
উমর মুখতারের সাথে মিসরে অবস্থানকারী সানুসি নেতৃবৃন্দ দেখা করেন। তারা তাকে বলেন, আপনি এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। আপনি এখানেই অবস্থান করুন। লিবিয়ায় জিহাদ পরিচালনা করার জন্য আমরা অন্য কাউকে দায়িত্ব দিব। একথা শুনে উমর মুখতার রেগে যান। তিনি বলেন, যারা আমাকে এই প্রস্তাব দিচ্ছে তারা আমার কল্যান চায় না। এটা আমার জন্য কল্যানের রাস্তা। যারা আমাকে এর থেকে সরাতে চাইবে তারা আমার শত্রু। উমর মুখতার এই জিহাদকে ফরজ মনে করেই অংশগ্রহন করেছিলেন। তিনি সবসময় দোয়া করতেন, হে আল্লাহ এই পবিত্র রাস্তায়ই যেন আমার মৃত্যু হয়। তিনি বলতেন জিহাদ ছাড়া মুক্তির আর কোনো পথ নাই।
(উমর মুখতার– ড. আলী মুহাম্মদ আস সাল্লাবী)