ইমাম আন নাবলুসি

মিসরের উবাইদি (১) শাসক আবু তামিম সাদ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছে। তার সামনে উপস্থিত করা হয়েছে বিশিষ্ট আলেম মুহাম্মদ বিন আহমাদ বিন সাহল রমালিকে। আবু তামিমের কাছে সংবাদ এসেছে এই আলেম উবাইদি শাসনের বিরুদ্ধে নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে।

‘আমার কাছে সংবাদ এসেছে , আপনি নাকি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন, যদি আপনার কাছে ১০টি তীর থাকে তাহলে আপনি একটি রোমানদের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করবেন, আর নয়টি আমাদের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করবেন। এটা সত্য?’ আবু তামিম প্রশ্ন করলো।

‘না , আমি এমন কথা বলিনি’ শায়খ শান্ত কন্ঠে বললেন।

‘তাহলে কী বলেছেন?’ শায়খ তার অবস্থান পরিবর্তন করছেন ভেবে খুশি হয়ে উঠে আবু তামিম সাদ।

‘আমি বলেছি যদি আমার কাছে দশটি তীর থাকে, তাহলে আমি নয়টি তোমাদের দিকে নিক্ষেপ করবো এবং দশমটিও তোমাদের দিকেই নিক্ষেপ করবো। কারন, তোমরা আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করেছো, নেককারদের হত্যা করেছো, তাওহিদের আলোকে নিভিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছো’ শায়খ দৃঢ় কন্ঠে বললেন।

আবু তামিম ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে যায়। সে প্রহরীদের আদেশ দেয় শায়খকে বন্দী করতে। শায়খকে বন্দী করা হয়। দ্বিতীয় দিন শায়খকে চাবুক দিয়ে প্রচন্ড প্রহার করা হয়। এরপর একজন ইহুদিকে আদেশ দেয়া হয় জীবন্ত অবস্থাতেই শায়খের চামড়া আলাদা করে ফেলতে। শায়খের হাত পা বেধে ফেলা হয়। ইহুদি ধারালো ছুরি দিয়ে দিয়ে তার চামড়া আলাদা করতে থাকে। শায়খ সে সময় কোরআন তিলাওয়াত করছিলেন। এ দৃশ্য দেখে ইহুদির মনে দয়ার উদ্রেক হয়। সে শায়খের বুকে ছুরি বসিয়ে দেয়। শায়খ শহিদ হয়ে যান। (২) শায়খের ইন্তেকালের পর তার চামড়া থেকে কোরআন তিলাওয়াতের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। (৩)

ইমাম দারা কুতনি যখনই শায়খের কথা আলোচনা করতেন তখন তিনি কান্না করতেন। একবার তিনি বলেন, যখন শায়খের চামড়া তার শরীর থেকে আলাদা করা হচ্ছিল তখন তিনি কোরআনের এই আয়াত তেলাওয়াত করছিলেন,
كَانَ ذَٰلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا
ইহা তো কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৫৮)

শায়খ ছিলেন হাদিস ও ফিকহের ইমাম। একই সাথে হক কথা বলার ক্ষেত্রে তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। বেশিরভাগ দিন তিনি রোজা রাখতেন। শায়খ যখন মিসরে আসেন , তখন কেউ কেউ বলেছিল, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে নিরাপদ রেখেছেন। জবাবে শায়খ বলেছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ এখনো আমার দ্বীন নিরাপদ রেখেছেন।

শায়খের শাহাদাতের পর ইবনুশ শাশা তাকে স্বপ্নে দেখেন। স্বপ্নে শায়খকে দেখা যায় সুন্দর অবয়বে। ইবনুশ শাশা প্রশ্ন করেন, আল্লাহ আপনার সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন? জবাবে শায়খ বলেন, আমার প্রভু আমাকে তার ভালোবাসায় আবদ্ধ করেছেন। তিনি আমাকে নৈকট্য দান করেছেন, এবং বলেছেন তার প্রতিবেশী হয়ে থাকতে। (৪)

সূত্র
————
১। উবাইদি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উবাইদুল্লাহ মাহদি। সে ছিল শিয়া। তার সম্পর্কে ইমাম যাহাবী সিয়ারু আলামিন নুবালা’তে লিখেছেন, উবাইদুল্লাহ আবু মুহাম্মদ বাতেনি উবাইদিয়্যাদের প্রথম খলিফা। তারা ইসলামকে পরিবর্তন করেছিল, শিয়া মতাদর্শ প্রচার করেছিল। উবাইদিদের শাসনকালে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। তারা বিকৃত আকিদা বিশ্বাস প্রচার করতো। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন, ড. আলী মুহাম্মদ আস সাল্লাবি রচিত ‘আদ দাওলাতুল ফাতিমিয়্যা আল উবাইদিয়্যা’।
২। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১৫/৩৬৭– হাফেজ ইমাদুদ্দিন ইবনে কাসির।
৩। সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৬/১৪৯– হাফেজ শামসুদ্দিন যাহাবী।
৪। তারিখুল ইসলাম, ২৬/৩১২– হাফেজ শামসুদ্দিন যাহাবী।

অন্যান্য লেখা

বইয়ের ক্যাটালগ ডাউনলোড করুন