দিল্লি।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজি দরবারে ডেকেছেন বিশিষ্ট আলেম কাজি মুগিসউদ্দিনকে।
‘আমি দেবগিরিতে হামলা করে যেসকল সম্পদ পেয়েছি তা আমার নিজের কাছেই রেখেছি। এটা কি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দেয়ার প্রয়োজন আছে?’ (১) প্রশ্ন করলেন সুলতান।
‘এই হামলায় অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রের সেনাদের দ্বারাই অর্জিত হয়েছে। তাই এই সম্পদ অবশ্যই বাইতুল মালে (কোষাগার) জমা দিতে হবে’ কাজি সাহেব দৃঢ়কন্ঠে বললেন।
‘এ কেমন কথা? এই অভিযানে আমি নিজের জান বাজি রেখে লড়েছি। এটা ছিল এমন এক স্থান যার কথা এর আগে দিল্লির লোকেরা জানতেও পারেনি’ সুলতান রেগে গেলেন।
‘আপনি আমার কাছে শরিয়তের মাসআলা জিজ্ঞেস করেছেন। আমি তাই বলেছি’ কাজি মুগিসউদ্দিন শান্তকন্ঠে বললেন।
‘বাইতুল মাল থেকে আমি নিজের জন্য কী পরিমান ভাতা নিতে পারি?’ সুলতান আবার প্রশ্ন করলেন।
‘ আপনি যদি খোলাফায়ে রাশেদার অনুসরণ করেন তাহলে নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য ২৩৪ তংকা গ্রহণ করতে পারেন। অথবা চাইলে আপনি দরবারের আমীরদের পরিমান ভাতাও গ্রহণ করতে পারেন। অথবা তাদের চেয়ে সামান্য কিছু বেশিও নিতে পারেন, যেন আপনার সম্মান ও বিশিষ্টতা থাকে। এই তিন পন্থার বাইরে যদি বাইতুল মাল থেকে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করেন, লালা জওহর খচিত পোশাক যদি বাইতুল মাল থেকে নেন কিংবা কাউকে দেন তাহলে কিয়ামতের দিন অবশ্যই আপনাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে’
এই জবাব শুনে সুলতান আরো রেগে গেলেন। তিনি বললেন, আমি শুনেছি আপনি আমার অনেক আদেশকেই শরিয়াহ বিরোধী বলে প্রচার করছেন। যেমন, বিদ্রোহীদের সপরিবারে বিনাশ করা, ব্যভিচারীর পুরুষাংগ কেটে নেয়া এবং মহিলাকে হত্যা করা ইত্যাদী।
‘আমিও আগেও বলেছি এখনও বলছি এগুলো পরিস্কার শরিয়াহ বিরোধী কাজ। শরিয়াহয় এমন কোনো আদেশ দেয়া হয়নি’
সুলতান প্রচন্ড ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, আপনি কি আমার তরবারীকে ভয় করেন না?
‘হ্যা ভয় করি। এজন্যই কাফনের কাপড় হিসেবে পাগড়ি সাথে নিয়ে ঘুরি’ কাজি শান্তকন্ঠে বললেন। এই জবাব শুনে সুলতান চুপ হয়ে গেলেন। একটু পর তিনি উঠে ভেতরে চলে যান। কাজি সাহেব নিজের গৃহে ফিরে আসেন।
—
পরদিন কাজি মুগিস আবারও সুলতানের দরবারে গেলেন। যাওয়ার আগে তিনি পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নেন, গোসল করেন। তাকে দেখেই সুলতান প্রসন্ন হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, আপনি তো জানেন আমি পড়ালেখা করিনি। তবে আমি মুসলমানের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছি। আমি বিদ্রোহ দমন ও রাজ্যের উন্নতির জন্যই নানাবিধ আদেশ দিয়েছি। এসব আদেশ দেয়ার সময় শরিয়াহর বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে পারিনি। জানি না কিয়ামাতের দিন আল্লাহ আমার জন্য কী ফয়সালা করেন। (২)
সূত্র
——————–
১। সুলতান এই হামলা করেছিলেন কোড়া অঞ্চলের প্রশাসক থাকা অবস্থায়, তার শ্বশুর জালালুদ্দিন খলজির শাসনকালে। সে সময় স্ত্রীর সাথে আলাউদ্দিনের সম্পর্ক খারাপ ছিল, শ্বশুরের উপরও তিনি ছিলেন নাখোশ। তিনি চাচ্ছিলেন প্রচুর ধনসম্পদ অর্জন করে দূরে কোথাও চলে যাবেন। তাই সুলতানকে না জানিয়েই তিনি দেবগিরিতে হামলা করেন এবং প্রচুর সম্পদ অর্জন করেন। বিস্তারিত জানতে দেখুন জিয়াউদ্দিন বারণী লিখিত তারীখে ফিরোজশাহী।
২। নুজহাতুল খাওয়াতির, ২য় খন্ড, ২১৩ পৃষ্ঠা– আবদুল হাই হাসানি নদভী।